‘দেশে জনস্বাস্থ্যের ভিত্তি দৃঢ় না হলে নাগরিকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে না’

ভারতের হেলথ কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গৌতম সেন বলেছেন, দেশে জনস্বাস্থ্যের ভিত্তি দৃঢ় না হলে নাগরিকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। ব্যয়বহুল হাসপাতাল তৈরির চেয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ জরুরি।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন দিবস উদ্যাপন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে গৌতম সেন এ কথা বলেন। গবেষণা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার ব্যয় বেড়ে যায়।


পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, আইসিডিডিআরবি ও ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনোভেশনস ইন টেকনোলজি অ্যান্ড হেলথ যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী এই বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে। গতকাল সকালে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জাতীয় অধ্যাপক আব্দুল মালেক, বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং আইসিডিডিআরবির উপনির্বাহী পরিচালক আব্বাস ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী ভ্যালেরি এ টেইলর এবং জনস্বাস্থ্য শিক্ষায় অবদানের জন্য ঠ্যাঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগমকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
গৌতম সেন মূল উপস্থাপনায় বলেন, অর্থ বেশি থাকলেও স্বাস্থ্যের উন্নতি না-ও হতে পারে। ভারতের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার চেয়ে বহু গুণে বড়। কিন্তু মাতৃমৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার ভারতের চেয়ে শ্রীলঙ্কায় অনেক কম। শ্রীলঙ্কায় টিকাদানের হার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারের হার ভারতের চেয়ে বেশি। জনস্বাস্থ্য তথা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দিয়ে শ্রীলঙ্কা এটা সম্ভব করেছে। তিনি বলেন, তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলোতে অর্থের অপচয় বেশি হয়। মেডিকেল শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক রাজনীতিক মেডিকেল শিক্ষার নামে কলেজ স্থাপন করছেন। তাঁরা এটা করছেন মূলত অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে।


এর পরের অধিবেশনে মেডিকেল শিক্ষা বিষয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, মেডিকেল শিক্ষা বিস্তারের কথা বলে একের পর এক কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে। ঢাকাতেই যেখানে শিক্ষকের অভাব আছে, সেই অবস্থায় অন্য এলাকার কলেজগুলোতে কারা পড়াচ্ছেন? কলেজগুলোতে ল্যাবরেটরি আছে কি না? তিনি বলেন, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মতো প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য উদ্যোগে সব সময়ই প্রথম আলোর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ও সমর্থন থাকবে।


অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মালেক বলেন, দেশে হৃদ্রোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। হাসপাতাল আর চিকিৎসক দিয়ে এই সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও জনসচেতনতার ওপর জোর দিতে হবে, যেন এসব রোগ না হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর মতো সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সহায়তা প্রয়োজন।


অনুষ্ঠানে ভ্যালেরি এ টেইলর, হোসনে আরা বেগম, আব্বাস ভূইয়া, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুজাহেরুল হক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াসমিন এবং ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনোভেশনস ইন টেকনোলজি অ্যান্ড হেলথের ভাইস চেয়ারপারসন নিলুফার আহমেদ করিম বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Skip to content