দেশে চক্ষুসেবা গ্রহণে পিছিয়ে নারীরা, বৈষম্য কমোনোর ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম

দেশে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও উচ্চতর শিক্ষায় নারীদের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। কিন্তু পুরুষের তুলনায় নারীরা চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অনেক পিছিয়ে। তাই চক্ষু চিকিৎসায় নারী ও পুরুষের এই বৈষম্য কাটাতে একটি নেটওয়ার্ক গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘চোখের স্বাস্থ্যে জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং’ শীর্ষক এক পরামর্শ-কর্মশালায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে এমন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এই নেটওয়ার্ক গঠন করা হবে। এই নেটওয়ার্কের লক্ষ্য চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় মেইনস্ট্রিমিং এবং সবার জন্য চোখের যত্নের সুযোগ সৃষ্টি করা।

নেটওয়ার্কের প্রথম সভা হিসেবে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন অপথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওএসবি) সভাপতি এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেস (আইএপিবি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি চেয়ার অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন।

কর্মশালায় অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, চিকিৎসা শিক্ষায় এবং চক্ষুবিদ্যায় উচ্চতর অধ্যয়নে নারীদের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি, কিন্তু তারপরও নারীরা চক্ষু সেবা গ্রহণে পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ এবং দৃষ্টিত্রুটি সংশোধনে চশমা পরার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধাগুলো তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চক্ষুসেবা খাতের অংশীজনদের স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের একটি মাল্টি-সেক্টর অ্যাকশন প্ল্যান দরকার যার অধীনে আমরা পুরো সমাজের জন্য একসাথে কাজ করব।

অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ বলেন, জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিংয়ের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখন উপযুক্ত সময় পরিকল্পনাগুলোকে কার্যকর করার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের সাবেক পরিচালক ডা. খালেদা ইসলাম বলেন, সার্বজনীন চক্ষু স্বাস্থ্য কভারেজ বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তি ও সমতার জন্য একটি ‘বহু-খাত’ ও ‘গোটা-সমাজ’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী আরও বেশি নারীকে চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনতে জেলা পর্যায়ে দক্ষ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, নারী চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা আগামী ১০ বছরে পুরুষদের চেয়ে বেশি হবে। কিন্তু আমরা এ থেকে উপকৃত হবো না যতক্ষণ না আমরা এসব চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে পাঠাতে পারি। 

সমতা ও মানবাধিকার কর্মী শীপা হাফিজা, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং ফেইথ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক নিলুফার করিম, সেভ দ্য চিলড্রেনের জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন উপদেষ্টা শাহানুর আক্তার চৌধুরী, ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক (কমিউনিটি সার্ভিস) গাজী নজরুল ইসলাম ফয়সাল, হেলেন কেলারের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান ডা. আফসানা হাবিব শিউলী, রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. ফারহানা হক, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম হেড মাসুম বিল্লাহ, ডেভরেসোন্যান্সের প্রধান নির্বাহী নাজমে সাবিনা, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার (জিএসি) প্রো-নার্স প্রকল্পের টিম লিডার ডা. সেলিনা আমিন, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) সহকারী পরিচালক আনিকা রহমান লিপি, ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিহান আবেদিন, সাইটসেভার্সের প্রোগ্রাম ম্যানেজার বিএম জাহিদুল ইসলাম, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রাহমানু অঞ্জলা, বিএনএসবি মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুশাহিদ আহমেদ এবং ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. নুরুল আলম সিদ্দিকী আলোচনায় অংশ নেন।

কর্মশালায় অরবিসের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ম্যানেজার মির্জা মানবিরা সুলতানা অরবিসের পার্টনার হাসপাতালগুলোতে পরিচালিত একটি গবেষণার ভিত্তিতে প্রণীত ‘বাংলাদেশ জেন্ডার-ভিত্তিক বিশ্লেষণের ফলাফল’ উপস্থাপন করেন। বিশ্লেষণে তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক চক্ষুসেবার চারটি বাধা চিহ্নিত করেন। এগুলো হলো কাঠামোগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নীতিগত বাধা।

দেশে চক্ষুসেবা গ্রহণে পিছিয়ে নারীরা, বৈষম্য কমোনোর ঘোষণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Skip to content