স্টাফ রিপোর্টার | ২০১৫-১২-০৯ ৯:৩৬
ডায়রিয়া, জ্বর ও নিউমোনিয়া এখন শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ২৬ শতাংশ শিশু ডায়রিয়া, ২১ শতাংশ জ্বর, ১৬ শতাংশ নিউমোনিয়া, ১৩ শতাংশ সাধারণ ঠাণ্ডা ও ১১ শতাংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল। চলতি বছরের জুনে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ২০৮টি ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছিল। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর’বি মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই তথ্য জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তৃতীয় পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন দিবস উপলক্ষে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং ফেইথ বাংলাদেশ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি, শিশুস্বাস্থ্য, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে ২৫টি গবেষণা প্রতিবেদন ও নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দুইজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম মুজাহেরুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ চিকিৎসার ব্যয় মিটাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, ক্যানসার ও কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসার-ব্যয় মেটাতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট স্বাস্থ্যসেবাদানের প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও কর্মী থাকলেও নাগরিকরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যের ব্যবহৃত সূঁচের সাহায্যে মাদক গ্রহণ করেন। ফলে তারা এইচআইভি/এইডস ও হেপাটাইটিস বি-’র মতো সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ মাত্রার ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। হেপাটাইটিস বি বিষয়ে মানুষের জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চা মূল্যায়নের লক্ষ্যে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ঢাকার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে দেড়শত রোগীর ওপর চলতি বছর এ গবেষণা চালায়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ বহুগামী যৌনাচারে অভ্যস্ত যাদের মধ্যে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক সম্পর্কের সময় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, যারা অন্যের রক্ত গ্রহণ করেছেন, তাদের ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরীক্ষাহীন রক্ত নিয়েছেন। ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তর প্রদানকারী জানিয়েছেন, তারা কখনও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নেয় না। অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, ধূমপান, হতাশা, চাকরি-সম্পর্কিত মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা-সম্পর্কিত ১৬০টি ঘটনা নিয়ে ওই গবেষণা চালায় এবং সংশ্লিষ্ট ৪৫ শতাংশ উত্তরকারী জানান তারা ধূমপায়ী। এছাড়া, ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তর প্রদানকারী তাদের মধ্যে হতাশা, ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরি নিয়ে মানসিক চাপ, ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ ডায়াবেটিস এবং ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। সম্মেলনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. সর্দার মাহমুদ হোসেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডা. রজত দাশগুপ্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. সাজিয়া হক, অধ্যাপক ডা. শারমিন ইয়াসমিন প্রমুখ।
যারা পুরস্কার পেলেন: জনস্বাস্থ্যখাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডের (সিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী ড. ভ্যালেরি অ্যান টেলর এবং ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগমকে পুরস্কারে ভূষিত করলো পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার তাদের হাতে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম. মোজাহেরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জাতীয় অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও আইসিডিডিআর,বি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. আব্বাস ভূঁইয়া।